বাংলাদেশে চাকরি করছে লাখ লাখ বিদেশি যে কৌশলে ভিসা নিয়ে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর প্রাক্কলিত ন্যূনতম সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। আর তারা বছরে ৩৮,২৭১ কোটি টাকা আয় করছে।

ন্যূনতম এই সংখ্যার হিসেবে দেশ থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে পাচার হয়ে যায়। তাদের কর ফাঁকির ফলে বছরে ন্যূনতম প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।

‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধ উপায়ে প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ বিদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে। তারা প্রতিবছর বাংলাদেশ হতে বৈধ ও অবৈধ পথে প্রায় ৫ হতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনিয়ম হচ্ছে ভিসা নীতির সরাসরি লঙ্ঘনের মাধ্যমে কর্মোপযোগী ভিসা ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে।

এ ক্ষেত্রে কর্মপ্রার্থী বিদেশি নাগরিক সাধারণত টুরিস্ট ভিসা বা ভিসা অন অ্যারাইভাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে কর্মানুমতি ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেয়।

আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা নিজ দেশে বা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে চলে যায় এবং পুনরায় একই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করে।

বৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত বিদেশি কর্মী নিয়োগের পূর্বে উক্ত পদে স্থানীয় যোগ্য প্রার্থী খোঁজা হয় না। বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।

নিয়মবহির্ভূত অর্থের মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভিসার সুপারিশপত্র এবং কর্মানুমতি দ্রুত পাওয়া যায় এমন অভিযোগ রয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশন হতেও টুরিস্ট ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া নিয়মবহির্ভূত অর্থের বিনিময়ে ভিসার সুপারিশপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই এমপ্লয়মেন্ট/বিজনেস ভিসা ইস্যু করার অভিযোগ রয়েছে।

কর্মানুমতি প্রদান করার পূর্বশর্ত হিসেবে নিরাপত্তা ছাড়পত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায় এবং নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেওয়া না হলে নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রদানে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ রয়েছে।

কর্মানুমতি পাওয়ার পর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় গড়ে ২৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা ভিসা প্রতি লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি কর্মী নিয়োগের ফলে স্থানীয় প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং নির্দিষ্ট পদে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়।

বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে দেশি-বিদেশি কর্মীর অনুপাত মানা হয় না। একই প্রতিষ্ঠানে একজন বিদেশি কর্মীর সর্বোচ্চ ৫ বছরের বেশি কাজ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় বিদেশি কর্মী নিয়োগের কারণে বেতন-ভাতা বাবদ রাষ্ট্রের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের যুবদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি (বিশ্বব্যাংক ও আইএলও-২০১৭), এবং বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার ৪৭ শতাংশ (ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ২০১৪)।

এতে বলা হয়, প্রায় ৪৪টির বেশি দেশ থেকে আগত বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দেশসমূহ হচ্ছে- ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, নরওয়ে ও নাইজেরিয়া।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চামড়া শিল্প, চিকিৎসা সেবা এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি কর্মরত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর